আজ ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কিশোরগঞ্জে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: সোমবার (৩ জুলাই) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি। গত পহেলা জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বর্বরোচিত হামলায় অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি ও
অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হওয়া ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

অপর দিকে বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ। সোমবার (৩ জুলাই) অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা সরকার খুব অচিরেই চলে যাবে। যদি না যায় আমি মনে করবো আমার ৫৮
বছরের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা বৃথা। শেখ হাসিনা কোনদিন ২০২৩ সালের নির্বাচন করতে পারবে না। ২০২৩ এর শেষে বা ২০২৪ সালের প্রথমে শেখ হাসিনার অধিনে কোন নির্বাচন হবে না-না-না। এই দেশে জনগণের সরকার হবে,
তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে। সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে বেরিযে এসে বিএনপি’র নেতৃত্ব দিবেন। তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী শক্তি জয়ী হবে। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে, আগামী দিনে জীবনপন আন্দোলনের মাধ্যমে অবশ্যই শেখ হাসিনার সরকারকে এ দেশ থেকে বিদায় করবো। তিনি বলেন, গত ১ জুলাই দুপুরে তার নির্বাচনী এলাকা অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের আহŸায়ক তিতুমীর হোসেন সোহেলের গ্রেফতার প্রতিবাদে পুর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মস‚চি ছিল। এসময় তার নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে
বিএনপি অফিসের দিকে যেতে চাইলে পতিমধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় বিএনপি’র ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হোন। ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে
আটক করে পুলিশ।

পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুলসহ ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃত নেতা কর্মীদেও মুক্তির দাবী জানান এই নেতা।

এসময় জেলা বিএনপির সহসভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল,সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাঈল মিয়া, ছাত্রদলের সভাপতি মো. মারুফ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ নেভিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ। সোমবার (৩জুলাই) অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চু বলেন, গত শনিবার (১ জুলাই) বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এড. ফজলুর রহমান ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগদান করতে
অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্টে আসেন। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপিসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কয়েক’শ লাঠির মাথায় পতাকা সম্বলিত একটি মিছিল নিয়ে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে জিরো পয়েন্টের দিকে যায়। সেখানে তাদের কি অনুষ্ঠান ছিলো এ বিষয়ে আমরা অবগত নই। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অষ্টগ্রামে আগমন উপলক্ষে উপজেলা ছাত্রলীগ একই দিনে একটি স্বাগত মিছিল বের করে। মিছিলটি অষ্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জামতলী মোড়ে গেলে লাঠিশোটাসহ বিএনপির একটি মিছিল বিপরীত থেকে এসে উস্কানিমূলক স্রোগান দিতে থাকে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তখন পাল্টা স্লোগান দিলে দুই পক্ষের মধ্যে একটু বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বিএনপির মিছিল থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে ছাত্রলীগ যুবলীগসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক কর্মী আহত হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তিনি আরোও
বলেন এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একটি সংবাদ সম্মেলন ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদী বলে
আখ্যায়িত করেন। তার বক্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার ও বানোয়াট বলে প্রতীয়মান হয়। বিএনপি সবসময় মিথ্যাচার এবং নৈরাজ্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।

পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে সঠিক সময়ে তার উচিত জবাব দেয়া হবে। আমার উপজেলা আওয়ামী লীগ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জেমস বলেন,
গত ১ জুলাইয়ের ঘটনা অষ্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনার আবির্ভাব ঘটিয়েছে। এ উপজেলার মানুষ সহমর্মিতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলো। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা তা নষ্ট করে দিয়েছে। বিএনপির অনুষ্ঠানস্থল
বাজার থেকে অনেকটা দূরে। তারা কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রলীগের উপর যে হামলা করবে তা যদি আমরা জানতাম তাহলে আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করতাম। এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের জবানবন্দি নিয়ে একটি মামলা অষ্টগ্রাম মডেল থানায় দায়ের করা হয়েছে। সিসিটিভি ও বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘটনার ফুটেজ নিয়ে ঘটনায় জড়িতদের আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ